অতঃপর গণবিদ্রোহের অপেক্ষা
Friday, February 27, 2009
বিডিআর বিদ্রোহ শেষ হয়েছে। খবরে জানা গেল, সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যকে মেরে ফেলা হয়েছে। এটা জেনে খুব খারাপ লাগল। তারা চোর হতে পারে, কিন্তু তাই বলে তো আর বিনাবিচারে তাদেরকে মেরে ফেলা উচিত নয়। দেশে আইন আছে, আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হতে পারে। কিন্তু বিডিআর সদস্যরা তার জন্য অপেক্ষা করেনি। নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে।
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাথমিকভাবে নিহত সেনাসদস্যদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু সেনাবাহিনীর লোকেরা কি ভাল মানুষ হয়? যারা তাদের আত্মীয় তারা হয়তো নানারকম পজিটিভ কথা বলবে। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ নাগরিক তারা সেনাবাহিনী সম্পর্কে কিরকম চিন্তা করি, তা নিশ্চয় সবাই জানেন। সাধারণ মানুসের মনে সেনাবাহিনীকে নিয়ে কি অনুভূতি তা কি কেউ খতিয়ে দেখেছে? এই দিক দিয়ে আমি বিডিআর সদস্যদের সাহসী উদ্যোগের উচ্চ প্রশংসা করি। আমাদের মনের মধ্যে যে ক্ষোভটা বন্দুক হাতে না থাকার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়না, তারা ঠিক সেই কাজটি করেছেন। সেনাবাহিনী আমাদের দেশেরই মানুষ। আমাদের টাকা দিয়ে তাদেরকে পোষা হয়। বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য যেমন কুকুর পোষা হয়, ঠিক সেরকম দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের উপর ন্যস্ত থাকে। আমাদের টাকাতেই তাদের খোরপোষ চলে, অথচ সেনাবাহিনীর লোকেরা আমাদের সাথে কি কুৎসিত নোংরা ব্যবহারটাই না করে? বিডিআরদের এই প্রতিবাদে যদি তাদের কোনরকম শিক্ষা হয়। তাহলে ভাল। তাদের জানা উচিত। সাধারণ মানুষদের হাতে কোন অস্ত্র নাই, থাকলে তারাও বিডিআরদের মতো সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে গুলি করে মেরে ফেলত। আত্মীয় ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে বাংলাদেশের খুব কম মানুষ ভালবাসে বলে আমার বিশ্বাস। এই বিদ্রোহেই তো বিডিআরদের দাবীর প্রতি সারা বাংলাদেশের মানুষের সহানুভূতি ছিল। ঢাকায় গতকাল সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে বিডিআর গেটে ঢুকতে গেলে সাধারণ জনগণ বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল।
- আমাদের অর্থাৎ সাধারণ মানুষদের সাথে সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে মেজর, কর্ণেল, লেফটেন্যান্ট ইত্যাদির আচরণ জঘন্যরকমের খারাপ।
- আমাদেরকে তারা Bloody civilian বলে গালি দেয়।
- তারা আমাদের প্রতি সামান্যতম সম্মান প্রদর্শন করে না।
- আমার জানামতে সিভিল অফিসাররা ঘুষ খায় হাজারে হাজারে, আর সেনাবাহিনীর লোকেরা ঘুষ খায় লাখে লাখে।
- তারা কি এর আগে সাধারণ জনগণকে হত্যা করার শাস্তি থেকে সাধারণ ক্ষমা চেয়ে নেয়নি?
- ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের আশেপাশের বিলাশবহুল বাড়িগুলো সব সেনা অফিসারদের। ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি সেনা অফিসারদের। তারা কি এমন বেশি বেতন পায় যে এত দামী বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে পারে?
- বাংলাদেশ অর্থাৎ নিজ দেশ দখল করা ছাড়া তারা দেশের আর কি উপকারে এসেছে?
- আমারই তো মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে সেই মেজরটাকে ধরে যদি দু'চারটা থাপ্পড় দিতে পারতাম। সেই নরপশু হেলমেট না পড়ার কারণে আমার শ্রদ্ধেয় বয়োবৃদ্ধ স্যারের মাথায় লাঠি দিয়ে মেরেছিলেন। সাথে তার বৃদ্ধা স্ত্রী ছিল। কিন্তু সেই হারামজাদা মেজর নূন্যতম শ্রদ্ধাবোধ দেখায়নি। সেই শালা মেজরের পাছায় লাত্থি দিতে পারলে মনে শান্তি পেতাম। বিডিআররা আমার মনের মতো কাজ করেছে।
যে কোন সরকারি অফিসের বড়কর্তার সাথে দেখা করতে যান। দেখবেন কত রকমের ভাব তাদের। জনগণ যেন তাদের প্রজা। আর তারা যেন একএকজন জমিদারের বাচ্চা। এক একজন চরম বেয়াদপ ধরণের।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা তো আরও এককাঠি সরেস। শিক্ষাভবনে যান। দেখতে পারবেন শিক্ষকরা সেখানে অফিসারদের হাতে কিরকম লাঞ্চিত অপমানিত হন। পিয়নরাও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদেরকে দূর দূর করে। আমার হাতে যদি একটি একে ৪৭ থাকতো, যদি ১০টা গ্রেনেড থাকতো, তাহলে শিক্ষাভবনকে আমি ধুলোয় মিশিয়ে দিতাম। এডি, ডিজি, সচিবদেরকে শত শত গুলি করেও আমার মন শান্ত হতো না। এছাড়াও কাস্টমস, পশু সম্পদ বিভাগ, সমাজ কল্যাণ, একাউন্টেন্ট ইত্যাদি বিভাগের সাধারণ অফিসার থেকে শুরু করে ডিজি, সচিবদের ব্যবহার দেখলে রাগে শরীর রিরি করতে থাকে। মনে হয় গুলি করে সব শালাদের খুলি উড়িয়ে দেই। কিন্তু মাথা নত করে তাদের কুৎসিত ব্যবহার সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। আমাদের হাতে যে অস্ত্র নেই।
বিডিআরদের এই প্রতিবাদ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। মাথার উপরে যারা বসে আছেন, তারা সতর্ক হয়ে যান। একই রকম ভাগ্য আপনারও হতে পারে।
সেনাবাহিনীর দূর্নীতির খবর দিতে পারবে তাদের একাউন্টস অফিস। এই অফিসের অডিটরদের ধরে পাছায় দুটো চাবুক চালালেই তারা গড়গড় করে বলে দিবে কোন কোন অফিসার দুই নম্বরী করেছে। কোন মেজর, লেফটেন্যান্ট, কর্ণেল অবৈধ সুযোগের বিনিময়ে অডিটরদেরকে ঘুষ দিয়েছে। সব খবর বের হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ধারণা সরকার এই কাজটি করবে না। শেখ হাসিনা তার ভাষণের নামে যে ঢঙের অভিনয়টা করলেন, জ্বালাময়ী সাহারা খাতুন যে মাতৃত্বের ভড়ং করলেন, তাতে হতাশ না হয়ে পারছিনা। তারাও আসলে সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী। মাছ চুরি করে খাওয়া বাড়ির বেড়ালকে যে তারা সত্যিকার শাস্তি দিতে অক্ষম, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। শেষে দেখা যাবে, জনগণকেই আবার জাগতে হবে। জনগণকেই গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যবস্থা, দূর্নীতি দূর করতে হবে। তখন আবার কিছু ডিজি, সচিব মারা যাবেন, এই আরকি।
0 comments:
Post a Comment